ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ। যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়। এবার ব্যতিক্রম। কোন কর্মসূচি নেই। তবুও পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হয়েছে। সবাই পরিবারের কাছে আছে। পরিবারকে সময় দিয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসে সবাইকে ঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। করোনা পরিবারের সদস্যদের এক করে দিয়েছে। পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস। আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছে পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে।
সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত, বিশ^ পরিবার দিবসের যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য তা যথাযথভাবে অর্জিত হলে আজ ইউরোপ আমেরিকায় করোনা ভাইরাসে এত প্রাণহানি ঘটত না। উন্নত বিশে^ করোনা আক্রান্ত হয়ে যত লোক মৃত্যুবরণ করেছে তার বড় এক সংখ্যা বয়স্ক ব্যক্তি। যারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন। করোনার হানায় বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা নার্সিং সেবা নিয়ে একাকিত্ব জীবন-যাপন করা বয়স্করা সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন। আজ হয়তো তারা যৌথ পরিবারের গুরুত্ব হারে হারে টের পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালন শুরু হয় ১৯৯৫ সাল থেকে। বিশেষ করে, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশ্বের পশ্চিমা উন্নত দেশ গুলোতে পরিবারের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভেঙে যেতে থাকে পরিবারের প্রচলিত বন্ধন। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বিবাহ বিচ্ছেদসহ নানান সামাজিক সমস্যা। ফলে অনেক শিশুই বাবার পরিচয় ছাড়া বড় হতে থাকে। এই অবস্থায় পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর তাগিদ দেয় জাতিসংঘ। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ই মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। তাছাড়া, ১৯৯৫ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ব’- শীর্ষক সম্মেলনে সামাজিক বন্ধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মূলত এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পারিবারিক ছোট বড় সকল সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট রাখা। বিশেষ করে, শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শহুরে সমাজে যৌথ পরিবারের ধারণা ফিকে হয়ে এলেও গ্রামীণ সমাজে এখনও যৌথ পরিবারগুলো সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছে। আর এটাই আমাদের ঐতিহ্য। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করে যারা প্রত্যক্ষভাবে রক্তের সম্পর্ক অস্বীকার করে নিকটজনকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, তারা পরোক্ষভাবে আমাদের চিরাচরিত সমাজ-ব্যবস্থাকেই অস্বীকার করছে। আমাদের জাতিগত একটা বৈশিষ্ট্য আছে, আছে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এই সবকিছুকেই আমাদের ধারণ করে সামনে এগুতে হবে। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে বলেই আমাদের সামাজিক নানা সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে অস্থিরতা। ধর্মীয় বিধানেও রক্তের সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: